কোভিড-19 মহামারীর সময় কিভাবে আপনার নবজাতকের যত্ন নেবেন।

0
355

(বর্তমান সুপারিশসমূহ)

আপনি যদি আপনার নবজাতককে এমন একটি জগতে লালন-পালনের বিষয়ে চিন্তিত হন যা মহামারীর কবলে রয়েছে, তবে আপনার উদ্বেগকে সতর্কতার মধ্যে আনুন  – ভয়ের মধ্যে নয়।

নবজাতকদের যত্নশীল এবং সাহসী পিতামাতার প্রয়োজন। সুতরাং, সঠিক তথ্য এবং একটি ইতিবাচক মনোভাব দিয়ে নিজেকে তৈরী করুন।

মনে রাখার মতো কিছু জিনিস

  1. নবজাতক যেন এই ভাইরাসে আক্রান্ত না হয়
  2. নবজাতকের যেন অন্য কোনো সংক্রমণ না হয়
  3. সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার কারণে নবজাতকের শারীরিক, মানসিক ও আবেগগত স্বাস্থ্যের সঙ্গে আপোস করা উচিত নয়।

চ্যালেঞ্জগুলো কি কি?

কারা আক্রান্ত, তা জানার উপায় নেই।

কিছু আশ্বাসজনক ঘটনা

  1. এখন পর্যন্ত কোভিড-19 পজিটিভ মায়েদের গর্ভে জন্ম নেওয়া নবজাতকেরা আক্রান্ত হয়নি।
  2. আজ পর্যন্ত মায়ের অ্যামনিওটিক ফ্লুইড, কর্ড ব্লাড বা বুকের দুধে ভাইরাসের কোনও চিহ্নও পাওয়া যায়নি।

আপনার শিশুর জন্মের সাথে সাথে আপনার কি করা উচিত?

বর্তমান নির্দেশিকা অনুযায়ী তা মেনে চলুন –

  1. ত্বকের সাথে ত্বকের যোগাযোগ
  2. বুকের দুধ খাওয়ানো

একমাত্র সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত – ডেলিভারি রুমের  সকলের মতো – মাকেও অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে।

আপনার কি আপনার শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো উচিত?

হ্যাঁ – নিম্নলিখিত কারণে আপনাকে অবশ্যই বুকের দুধ খাওয়াতে হবে:

  1. এখনও পর্যন্ত মায়ের দুধে ভাইরাস পাওয়া যায়নি ।
  2. বর্তমানে ঐক্যমত হল যে, বুকের দুধ খাওয়ানোর সুবিধাগুলি যে কোনও ঝুঁকির চেয়ে অনেক বেশি।

এমনকি যদি আপনি কোভিড-19 পজিটিভ হন – আপনি বুকের দুধ খাওয়াতে পারেন, আপনি আপনার ডাক্তারের পরামর্শ নিতে পারেন। তাই চিকিৎসকের কাছে এই বিষয়ে পরামর্শ নিন।

যদি আপনি খুব অসুস্থ হন তাহলে আপনাকে ব্রেস্ট পাম্প ব্যবহার করে স্তনের দুধ বের করতে হবে এবং অন্য কাউকে আপনার শিশুকে খাওয়াতে বলা যেতে পারে। এই অবস্থায় – ডেডিকেটেড পাম্প ব্যবহার করুন। অনলাইন প্রিনেটাল ক্লাসে বুকের দুধ খাওয়ানো বুঝে নিন, যাতে এনগার্জিমেন্টের মতো সমস্যা এড়ানো যায়। সব সময় আপনার শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ খুব সাবধানে মেনে চলুন।

কীভাবে নিরাপদে রাখবেন আপনার সন্তানকে?

এই  3টি জিনিস অনুসরণ করুন-

  1. শিশুর গায়ে হাত দেওয়ার আগে নিজের হাত ধুয়ে নিন।
  2. আপনি যখন আপনার শিশুর আশেপাশে থাকবেন তখন একটি মাস্ক পরুন।
  3. 70% অ্যালকোহল-ভিত্তিক দ্রবণ দিয়ে ঘন ঘন সমস্ত সারফেসগুলো মুছুন।

আত্মীয়-স্বজন এবং অন্যান্যরা , যারা শিশুটিকে দেখতে চায়, তাদের সম্বন্ধে কী পরামর্শ রয়েছে ?

  1. প্রসবের সময় পরিবারের কেবল একজন সদস্যকে (সাধারণত বাবা) উপস্থিত থাকতে হবে।
  2. হাসপাতালে এবং জন্মের পর প্রথম 3 মাস কোনো ভিজিটর নয়।
  3. বাবা-মা ছাড়া অন্য কারোর সাথে সামাজিক/ধর্মীয় অনুষ্ঠান করা যাবে না।
  4. অভিভাবকদের অবশ্যই সামাজিক দূরত্বের নিয়ম মেনে চলতে হবে। যদি আপনি ইনফেকশনের শিকার হন তাহলে শিশুটি আপনার কাছ থেকে এটি পেতে পারে। আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে ভাববিনিময় করুন।

বাচ্চাকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার সময় কোন কোন সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে

  1. ডিসচার্জের সময় আত্মীয়দের ডেকে সাহায্য নেবেন না।
  2. হাসপাতালের করিডোরে যখন খুব কম লোক থাকে যেমন সকাল বা রাতের দিকে তখন ডিসচার্জ নিন।
  3. বাড়িতে গাড়ি চালানোর সময় গাড়িতে এ/সি চালু করবেন না। জানালাগুলো বন্ধ রাখুন।
  4. সোজা বাড়ি চলে যান। কোনও আত্মীয় বা প্রতিবেশীকে আপনার বাচ্চা দেখানোর জন্য থামবেন না।
  5. চাহিদা অনুযায়ী বুকের দুধ খাওয়াতে থাকুন। এটি শিশুকে হাইড্রেটেড, পুষ্ট এবং সংক্রমণ থেকে প্রতিরোধী রাখবে। এটাও নিশ্চিত করবেন যে ভিসিটররা যাতে তাদের দূরত্ব বজায় রাখেন।
  6. আপনার শিশুকে প্রচুর তাজা বাতাস এবং সূর্যালোকসহ একটি ভালো বায়ুচলাচল করে এমন ঘরে রাখুন। এসি ব্যবহার করা এড়িয়ে চলুন।

ইমিউনাইজেশন

আপনার শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী সমস্ত রুটিন ভ্যাকসিন দিন। করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকা সত্ত্বেও আপনার শিশুকে অন্যান্য মারাত্মক রোগ থেকে রক্ষা করা গুরুত্বপূর্ণ।

কান্নাকাটি

আপনার শিশু কাঁদলে আতঙ্কিত হবেন না। এর মানে এই নয় যে আপনি একজন খারাপ মা এবং এর মানে এই নয় যে আপনার শিশু পর্যাপ্ত বুকের দুধ পাচ্ছে না।

যখন তাদের বাবা-মা মানসিক চাপে থাকে তখন শিশুরা বেশি কাঁদে। শান্ত হোন, আপনার শিশুর ত্বকের সাথে আপনার  ত্বক স্পর্শ করুন   এবং চাহিদা অনুযায়ী বুকের দুধ খাওয়ান।

সেরা অনুশীলন অনুসরণ করুন

  1. ভার্নিক্স কেসোসা (আপনার শিশুর ত্বকের তৈলাক্ত উপাদান) অপসারণ করবেন না
  2. তুলো বা অন্য কিছু দিয়ে আপনার শিশুর চোখ বা নাক পরিষ্কার করবেন না।

কিভাবে বুঝবেন যে, আপনার বাচ্চা ঠিক আছে কিনা?

একজন সক্রিয় শিশু যে ভালো করে খাওয়া-দাওয়া করছে -একদিনে 6 থেকে 8 টি ডায়াপার ভিজিয়ে ওজন বৃদ্ধি করছে সুস্থ থাকার সম্ভাবনা আছে, এইসব লক্ষণ থাকলে  ইতিবাচক থাকুন। চিকিৎসকের পরামর্শ মন দিয়ে মেনে চলুন। বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রাখুন। মনে রাখবেন যে, আপনি আপনার চ্যালেঞ্জগুলো পুরো করেই ছাড়বেন।

লিখেছেন

ডাঃ দেবমিতা দত্ত এমবিবিএস, এমডি

ডাঃ দেবমিতা দত্ত একজন অনুশীলনকারী ডাক্তার, একজন প্যারেন্টিং কনসালট্যান্ট এবং WPA whatparentsask.com– ওয়েবসাইটের প্রতিষ্ঠাতা – তিনি ব্যাঙ্গালোরে থাকেন  এবং স্কুল এবং কর্পোরেট সংস্থাগুলিতে প্যারেন্টিং ওয়ার্কশপ পরিচালনা করেন। তিনি প্রত্যাশিত পিতামাতার জন্য প্রসবপূর্ব ক্লাস এবং নতুন পিতামাতার জন্য শিশু যত্নের ক্লাস পরিচালনা করেন। রেফারেন্স – ক্লিনিক্যাল প্র্যাকটিস গাইডলাইন – পেরিনেটাল – কোভিড-19 সংক্রমণের নবজাতক ব্যবস্থাপনা। ভিইআর.1.0. 26 মার্চ 2020। ভারতের প্রসূতি ও গাইনোকোলজিক্যাল সোসাইটিস ফেডারেশন। ন্যাশনাল নিওনাটোলজি ফোরাম ইন্ডিয়া। ইন্ডিয়ান একাডেমি অফ পেডিয়াট্রিক্স।

Reference – Clinical Practice Guideline – Perinatal – Neonatal Management of COVID-19 infection Ver.1.0। ২৬ মার্চ ২০২০। Federation of Obstetrical and Gynecological Societies of India। ন্যাশনাল নিওনেটোলজি ফোরাম ইন্ডিয়া। ইন্ডিয়ান অ্যাকাডেমি অফ পেডিয়াট্রিক্স।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here